বাংলাদেশের বেকারত্ব:৷
বেকারত্বে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সকল দেশের থেকে অনেক ধাপ এগিয়ে এটা আমরা সকলেই অবগত।বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এর মধ্যে বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ যুবকদের নিয়ে গঠিত, এবং তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বেকারত্ব শুধু একজন ব্যক্তির জীবনকেই প্রভাবিত করে না, বরং এর প্রভাব পুরো সমাজ এবং অর্থনীতির উপর পড়ে।
বেকারত্বের পরিসংখ্যান:-
বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় ৪.২% থেকে ৬% এর মধ্যে রয়েছে। তবে যুবকদের মধ্যে এই হার প্রায় ১২% থেকে ১৪% পর্যন্ত। সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন যুবক বেকার ছিলেন। এ কারণে সরকারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।
বেকারত্বের কারণসমূহ:
বেকারত্বে বাংলাদেশের অবস্থান বেশি বা বেকারত্ব বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। বেকারত্ব বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ তুলে ধরা হলো :-
১. শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তত্ত্বগত। এটি যুবকদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য দক্ষতা প্রদান করতে ব্যর্থ। অনেক গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি নিয়ে বের হলেও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব থাকে।
২. শিল্পের অভাব: শিল্পের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অভাব এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম হওয়া বেকারত্বের একটি বড় কারণ। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল, তবে কৃষির কাজ মৌসুমি এবং অস্থায়ী।
৩. মহামারীর প্রভাব: করোনা মহামারীর কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় বা তাদের কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়। এতে করে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
৪. বৈদেশিক চাকরির সুযোগ: অনেক যুবক বিদেশে কাজ করতে চায়, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা এবং সুযোগের অভাব রয়েছে। এটি অনেক যুবককে হতাশায় ফেলছে।
৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা: যুবকদের মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং নারীদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে বাধা প্রথাগত চিন্তাভাবনার ফল।
যুব বেকারত্বের প্রভাব:
যুব বেকারত্ব শুধু অর্থনৈতিক সমস্যাই নয়, এটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেও বিবেচিত হয়। বেকার যুবকরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্ব অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি, সামাজিক অস্থিরতা এবং পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি করে।
সরকারী উদ্যোগ:
বাংলাদেশ সরকার বেকারত্ব মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিছু মূল উদ্যোগ হলো:
১. কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: যুবকদের জন্য বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যাতে তারা দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
২. জব সার্চ প্ল্যাটফর্ম: সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে অনলাইনে চাকরি খোঁজার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, যা যুবকদের জন্য চাকরি খুঁজতে সাহায্য করে।
৩. উদ্যোক্তা সৃষ্টি: যুবকদের মধ্যে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
৪. স্মার্ট ভিলেজ উদ্যোগ: গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য স্মার্ট ভিলেজ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বেকারত্ব মোকাবেলায় একটি সুদৃঢ় ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
১. শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার: শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে তা বাজারের চাহিদার সাথে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের প্রাযুক্তিক ও বাস্তব জ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
২. শিল্পে বিনিয়োগ: নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়।
৩. সামাজিক সচেতনতা: যুবকদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা উচিত, যাতে তারা নিজেদের সক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারে।
৪. বৈদেশিক কর্মসংস্থান: বিদেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দেশের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের বেকারত্ব একটি জটিল সমস্যা, যা সমাধান করতে হলে বিভিন্ন স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উদ্যোগগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। যুবসমাজ দেশের ভবিষ্যৎ, তাই তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশ বেকারত্বের সমস্যার মোকাবেলা করে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
0 Comments