ঘুমের প্রয়োজনীয়তা

 




ঘুমের প্রয়োজনীয়তা:-

 আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আজকে এই লেখার মাধ্যমে আমরা ঘুমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো।


ঘুম মানব জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। একজন মানুষ তার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটান। কিন্তু এই ঘুমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। সঠিক পরিমাণে ও মানসম্পন্ন ঘুম না হলে শরীর এবং মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।


ঘুমের সংজ্ঞা ও প্রক্রিয়া:-

ঘুম এক প্রকার স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া যেখানে দেহ ও মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয়। এটি মূলত দুটি প্রধান ধাপে বিভক্ত:

১. নন-র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM): এটি ঘুমের প্রাথমিক ধাপ যেখানে শরীর ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে পৌঁছায়।

২. র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM): এই পর্যায়ে স্বপ্ন দেখা হয় এবং মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে।


ঘুমের সময় দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন, কোষ পুনর্গঠন, টিস্যু মেরামত এবং হরমোন নিঃসরণ ঘটে।


ঘুমের প্রয়োজনীয়তা:


১. শারীরিক পুনর্গঠন:-


ঘুমের সময় শরীরের কোষগুলো পুনর্গঠিত হয়। পেশি মেরামত, টিস্যুর পুনঃনির্মাণ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য গভীর ঘুম প্রয়োজন।


২. মানসিক স্বাস্থ্য:-


সঠিক পরিমাণে ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হতাশা বা উদ্বেগ কমাতে ভূমিকা রাখে। অপর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে এবং মানসিক ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়।


৩. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি:-


ঘুম মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়।


৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:-


ঘুমের মাধ্যমে আমাদের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রামক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।


ঘুমের অভাবের ক্ষতিকর প্রভাব


সঠিক পরিমাণে ঘুম না হলে শরীর এবং মন নানা সমস্যায় ভোগে। এর কিছু প্রধান প্রভাব হলো:


১. শারীরিক দুর্বলতা:-


ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়।


২. মানসিক চাপ:-


অপর্যাপ্ত ঘুম উদ্বেগ এবং হতাশার মাত্রা বাড়ায়। এটি মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল করতে পারে।


৩. কর্মক্ষমতা হ্রাস:-


পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা কমে যায়। এতে কাজের প্রতি আগ্রহও হ্রাস পায়।


সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার উপায়:-


ঘুমের মান উন্নত করতে এবং সঠিক সময় ধরে ঘুমানোর জন্য কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তোলা যায়:


১. নিয়মিত সময়ে ঘুমানো:-


প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং উঠা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।


২. শরীরচর্চা:-


নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের গুণগত মান বাড়ায়। তবে ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়।


৩. পরিবেশ তৈরি করা:-


শান্ত, অন্ধকার এবং আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানো ঘুমের মান উন্নত করে।


৪. ক্যাফেইন ও ইলেকট্রনিক্স পরিহার করা:-


ঘুমানোর আগে চা, কফি, এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার কমানো উচিত। এগুলো ঘুমের সময়কে প্রভাবিত করে।


বয়সভেদে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা


বয়স অনুযায়ী ঘুমের পরিমাণ ভিন্ন হয়।


শিশু: ১২-১৪ ঘণ্টা


কিশোর: ৮-১০ ঘণ্টা


প্রাপ্তবয়স্ক: ৭-৯ ঘণ্টা


প্রবীণ: ৬-৮ ঘণ্টা



উপসংহার:-


সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক পরিমাণে ও নিয়মিত ঘুম শরীর ও মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই ঘুমের প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। ঘুম শুধু ক্লান্তি দূর করে না; এটি আমাদের জীবনের সার্বিক মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


Post a Comment

0 Comments